পিডিএফ বুকঃ | সিংহশাবক |
সংকলকঃ | এনায়েতউল্লাহ আলতামাস |
প্রকাশনীঃ | আল-এছহাক প্রকাশনী |
উপস্থাপনায়ঃ | বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার |
কৃতজ্ঞতাঃ | কামাল আহমেদ বাগী |
সিংহশাবক সরাসরি ডাউনলোড লিঙ্ক দেয়া হয়েছে, একসাথে সকল খন্ড বা আলাদা-আলাদা খন্ড ডাউনলোড করতে পারেন ৷ ডাউনলোড করতে সমস্যা হলে বা কোন লিঙ্ক কাজ না করলে, কমেন্ট বা লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে জানান ৷
বড়ই রোমাঞ্চকর সেই যুগ যে যুগে আজকের স্পেনে সবুজ চাঁদ তারা নিশান উড়ত ৷ সুন্দর, স্বপ্নীল ও বর্ণিল অনুভূতি নিয়ে কর্ডোভার মসজিদ কালের সাক্ষী হয়ে আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ৷ আলহামরার পোড়া ইট, বালুকণা আজ তারিকী তলোয়ারের স্মৃতি-রোমন্থন করে ৷ গোয়াদেলকুইভার, জিব্রাল্টার প্রণালী, যাল্লাকা প্রান্তর, আলমেরিয়ার যমীন বুকে ধারন করে আছে বীর মুসলিম জাতির অশ্বখুরের ছোঁয়া ।
স্পেনের ইতিহাসের ধূসর পাতা খুললে সর্বাগ্রে মনে পড়ে সেই মহান বিজেতাদের অমিততেজা হিস্মতি উপাখ্যান, উপকূলে নেমে যারা জ্বেলে দিয়েছিলেন স্বদেশ ফেরা রণতরীগুলো ৷ অপরিচিত দেশ, অচেনা মানুষ এমন কি আসমান-যমীনেও যাদের কাছে বৈরী সেই মর্দে মুমিনদের এই দুঃসাহসিকতা দেখে ইউরোপিয়ান ঐতিহাসিকদের কলম পর্যন্ত স্তব্ধ হয়ে যায় ৷
মুসলিম জাতির বিজয় কেবল স্পেন ভূ-ভাগেই থেমে-থাকেনি সীমানা পেরিয়ে তা প্যারিস পর্যন্ত বিস্তৃত হয় ৷ কুলাঙ্গার উমাইয়া খলীফা সুলাইমান ইবনে আব্দুল মালিক, তারিক বিন যিয়াদ ও মূসা ইবনে নুসায়েরের অগ্রাভিযান মাঝপথে বাদ না সাধলে হয়ত আজকের ইউরোপের মানচিত্র অন্যভাবে আঁকতে হত ৷
মোটকথা স্পেন সেদিন একটি শক্তিধর মুসলিম রাজ্যে পরিণত হয়েছিল ৷ খোদাপাগল বিজেতাদের মৃত্যুর পর অবশ্য স্পেনের গদিতে এমন সব নীল ভ্রমরদের আবির্ভাব ঘটে যারা পূর্বসূরিদের রক্তমাখা উপাখ্যান গিলে খেতে থাকে ৷ কেন্দ্রীয় খলীফার শাসনাধীন হয়েও এরা নিজেদের বাদশাহ ভাবতে শুরু করে ৷ পতনের শুরুটা মূলত এখান থেকেই ৷ পরবর্তী ইতিহাস আরো বেদনাবিধুর ৷
খ্রিস্টানরা মুসলমানদের প্রজা ছিল তাদের সর্ব ধরনের নাগরিক সুবিধা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিল ৷ ইসলাম গ্রহণের জন্য তাদের ওপর জবরদস্তি করা হয়নি কোনদিনও ৷ এদের যারা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে-তারা নিজ উদ্যোগেই ইসলামের মহানুভবতায় আকর্ষিত হয়েছিল ৷ কিন্তু ধর্মান্ধ, প্রতিক্রিয়াশীল, প্রতিহিংসাপরায়ণ, মৌলবাদী, গোড়া খ্রিস্টানরা উগ্রবাদী মনোভাব নিয়ে স্পেন ও মুসলমানদেরকে স্পেন ছাড়া করতে আদা নুন খেয়ে ময়দানে নামে ৷ এই শয়তানী লক্ষে হেন কাজ নেই যা তারা করেনি ৷ এজন্য তারা তাদের সুন্দরী মেয়েদেরকে আমির-ওমরাদের প্রাসাদে পাঠিয়েছে! প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শয্যাসঙ্গিনী হয়ে এরা ধোঁকা, ষড়যন্ত্র ও বিদ্রোহে অদৃষ্টপূর্ব ভূমিকা রেখেছে ৷ এই কুলটা নারীরাই সেদিনের স্পেনে মুসলিম প্রশাসনের জন্য কালনাগিনী হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৷ দাগাবাজ বিদ্রোহী খ্রিস্টানরা ফ্রান্সসহ ইউরোপের অন্যান্য শাসকবর্গ থেকে মদদ পেতো ৷
বিধর্মীরা মুসলিম স্পেনকে যতটা না ক্ষতি করেছে তার চেয়ে অধিক ক্ষতি করেছে বিলাসী নারীলোভী ও মদ্যপ রাজা-বাদশাহরা ৷ বক্ষ্যমাণ বইয়ে আমি স্রেফ এমন এক আমিরের কাহিনী তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি ৷ আমার লেখার উপজীব্য হচ্ছে রাজধানী কর্ডোভার হেরেমে ঠাঁই পাওয়া চাটুকারদের ষড়যন্ত্র ও হেরেমের বাইরের এলোগেইছ ও ফ্লোরা কাহিনী ৷ ৮ম খ্রীষ্টাব্দের স্পেনের আমির ছিলেন দ্বিতীয় আঃ রহমান ৷ ওই সময় কিছু সিংহশাবক গাঁটে গামছা বেঁধে নেমেছিলেন আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ শত্রু থেকে স্পেনকে বাঁচাতে ৷ এরা স্রেফ স্পেন নয় বাঁচিয়েছিলেন আব্দুর রহমানকেও ৷
আমাদের কাহিনীকাররা ফ্লোরাকে কোন না কোন মুসলিম শাসকের হেরেমের হীরা সাব্যস্ত করেছেন ৷ তাকে নিয়ে রোমাঞ্চকর উপাখ্যান তৈরি হয়েছে ৷ কিন্তু বাস্তব এর উল্টো ৷ ফ্লোরা কোনদিনও মুসলিম হেরেমে কারো শয্যাসঙ্গিনী হয়নি ৷
সব শেষ কথা হল এটি উপন্যাস, ইতিহাসনির্ভর ৷ ঘটনা সত্য ৷ কাল্পনিকতা স্রেফ সাহিত্যের উপস্থাপনে, মৌলিকতায় নয় ৷ হায়! ও যুগের শাসকবর্গ ও আগামীদিনের শাসকবর্গ যদি এ থেকে সবক নিতেন ৷