পিডিএফ বুকঃ | ভারত অভিযান |
সংকলকঃ | এনায়েতউল্লাহ আলতামাস |
প্রকাশনাঃ | আকিক পাবলিকেশন্স |
উপস্থাপনায়ঃ | বাগী কুঞ্জালয় পাঠাগার |
কৃতজ্ঞতাঃ | কামাল আহমেদ বাগী |
ভারত অভিযান ১-৫ খন্ড সরাসরি ডাউনলোড লিঙ্ক দেয়া হয়েছে, একসাথে সকল খন্ড বা আলাদা-আলাদা খন্ড ডাউনলোড করতে পারেন ৷ ডাউনলোড করতে সমস্যা হলে বা কোন লিঙ্ক কাজ না করলে, কমেন্ট বা লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে জানান ৷
উপমহাদেশের ইতিহাসে সুলতান মাহমূদ গজনবী সতের বার ভারত অভিযান পরিচালনাকারী মহানায়ক হিসেবে খ্যাত ৷ সুলতান মাহমূদকে আরো খ্যাতি দিয়েছে পৌত্তলিক ভারতের অন্যতম দু'ঐতিহাসিক মন্দির সোমনাথ ও থানেশ্বরীতে আক্রমণকারী হিসাবে ৷
ঐসব মন্দিরের মূর্তিগুলোকে টুকরো টুকরো করে ধূলিসাৎ করে দিয়েছিলেন মাহমূদ ৷
কিন্তু উপমহাদেশের পাঠ্যপুস্তকে এবং ইতিহাসে মাহমূদের কীর্তির চেয়ে দুষ্কৃতির চিত্রই বেশি লিখিত হয়েছে ৷ হিন্দু ও ইংরেজদের রচিত এসব ইতিহাসে এই মহানায়কের চরিত্র যেভাবে চিত্রিত হয়েছে তাতে তার সুখ্যাতি চাপা পড়ে গেছে ৷ মুসলিম বিদ্বেষের ভাবাদর্শে রচিত ইতিহাস এবং পরবর্তী সেইসব অপইতিহাসের ভিত্তিতে প্রণীত মুসলিম লেখকরাও মাহমূদের জীবনকর্ম যেভাবে উল্লেখ করেছেন তা থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বোঝার উপায় নেই, তিনি যে প্রকৃতই একজন নিবেদিতপ্রাণ ইসলামের সৈনিক ছিলেন, ইসলামের বিধি-বিধান তিনি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতেন ৷ জাতি শত্রুদের প্রতিহত করে খাঁটি ইসলামী শাসন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও দৃঢ় করণের জন্যই নিবেদিত ছিল তার সকল প্রয়াস ৷
অপলেখকদের রচিত ইতিহাস পড়লে মনে হয়, সুলতান মাহমূদ ছিলেন লুটেরা, আগ্রাসী ও হিংস্র ৷ বারবার তিনি ভারতের মন্দিরগুলোতে আক্রমণ করে সোনা-দানা, মনি-মুক্তা, লুট করে গজনী নিয়ে যেতেন ৷ ভারতের মানুষের উন্নতি কিংবা ভারত কেন্দ্রিক মুসলিম সালতানাত প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা তার কখনো ছিল না ৷
যদি তৎকালীন ভারতের নির্যাতিত মুসলমানদের সাহায্য করা এবং পৌত্তলিকতা দূর করে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেয়ার একান্তই ইচ্ছা তার থাকতো, তবে তিনি কেন মোগলদের মতো ভারতে বসতি গেড়ে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না? ইত্যকার বহু কলঙ্ক এঁটে তার চরিত্রকে কলুষিত করা হয়েছে ৷
মাহমূদ কেন বার বার ভারতে অভিযান চালাতেন? মন্দিরগুলো কেন তার টার্গেট ছিল? সফল বিজয়ের পরও কেন তাকে বার বার ফিরে যেতে হত গজনী? ইত্যাদি বহু প্রশ্নের জবাব; ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ সৈনিক সুলতান মাহমুদকে তুলে ধরার জন্যে আমার এই প্রয়াস ৷ নির্ভরযোগ্য দলিলাদি ও বিশুদ্ধ ইতিহাস ঘেঁটে আমি এই বইয়ে মাহমূদের প্রকৃত জীবন চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ৷
প্রকৃতপক্ষে সালাউদ্দিন আইউবির মতই মাহমূদকেও স্বজাতির গাদ্দার এবং বিধর্মী পৌত্তলিকদের বিরুদ্ধে একই সাথে লড়াই করতে হয়েছে ৷ যতবার তিনি ভারত অভিযান চালিয়েছেন, অভিযান শেষ না হতেই খবর আসতো, সুযোগ সন্ধানী সম্রাজ্যলোভী প্রতিবেশী মুসলিম শাসকরা গজনী আক্রমণ করেছে ৷ কেন্দ্রের অস্তিত্ব রক্ষার্থে বাধ্য হয়েই মাহমূদকে গজনী ফিরে যেতে হতো ৷
একপেশে ইতিহাসে লেখা হয়েছে, সুলতান মাহমূদ সতের বার ভারত অভিযান চালিয়েছিলেন, কিন্তু এ কথা বলা হয়নি, হিন্দু রাজা-মহারাজারা মাহমূদকে উৎখাত করার জন্যে কতো শত বার গজনীর দিকে আগ্রাসন চালিয়ে ছিল ৷
সুলতান মাহমূদের বারবার ভারত অভিযান ছিল মূলত শত্রুদের দমিয়ে রাখার এক কৌশল ৷ তিনি যদি এদের দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হতেন, তবে হিন্দুস্তানের পৌত্তলিকতাবাদ সাগর পাড়ি দিয়ে আরব পর্যন্ত বিস্তৃত হতো ৷
মাহমূদের পিতা সুবক্তগীন তাকে ওসীয়ত করে গিয়েছিলেন, “বেটা! ভারতের রাজাদের কখনোও স্বস্তিতে থাকতে দিবে না ৷ এরা গজনী সালতানাতকে উৎখাত করে পৌত্তলিকতার সয়লাবে ক্বাবাকেও ভাসাতে চায় ৷ মুহাম্মদ বিন কাসিমের সময়ের মত ভারতীয় মুসলমানদেরকে হিন্দুরা জোর জবরদস্তি হিন্দু বানাচ্ছে ৷ এদের ঈমান রক্ষার্থে তোমাকে পৌত্তলিকতার দুর্গ গুড়িয়ে দিতে হবো ৷ ভারতের অগণিত নির্যাতিত বনি আদমকে আজাদ করতে হবে, তাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে ৷”
আল বিরুনী, ফিরিশতা, গারদিজী, উতবী, বাইহাকীর মতো বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ইতিহাসবিদগণ লিখেছেন, সুলতান মাহমূদ তৎকালীন সবচেয়ে বড় বুযুর্গ ও ওলী শাইখ আবুল হাসান কিরখানীর মুরিদ ছিলেন ৷ তিনি বিজয়ী এলাকায় তার হেদায়েত মতো পুরোপুরি ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৷
তিনি নিজে কিরখানীর দরবারে যেতেন ৷ কখনও তিনি তার পীরকে তার দরবারে ডেকে পাঠাননি ৷ উপরন্তু তিনি ছদ্মবেশে পীর সাহেবের দরবারে গিয়ে ইসলাহ ও পরামর্শ গ্রহণ করতেন ৷ তিনি আত্মপরিচয় গোপন করে কখনও নিজেকে সুলতানের দূত হিসেবে পরিচয় দিতেন ৷ একবার তো আবুল হাসান কিরখানী মজলিসে বলেই ফেললেন, “আমার এ কথা ভাবতে ভালো লাগে যে, গজনীর সুলতানের দূত সুলতান নিজেই হয়ে থাকেন ৷ এটা প্রকৃতই মুসলমানের আলামত ৷
মাহমূদ কুরআন, হাদিস ও দ্বীন ইলম প্রচারে খুবই যত্নবান ছিলেন ৷ তাঁর দরবারে আলেমদের যথাযথ মর্যাদা ছিল ৷ সব সময় তার বাহিনীতে শত্রুপক্ষের চেয়ে সৈন্যবল কম হতো কিন্তু তিনি সবসময়উ বিজয়ী হতেন ৷ বহুবার এমন হয়েছে যে, তার পরাজয় প্রায় নিশ্চিত ৷ তখন তিনি ঘোড়া থেকে নেমে ময়দানে দু'রাকাত নামাজ আদায় করে মোনাজাত করতেন এবং চিৎকার করে বলতেন, “আমি বিজয়ের আশ্বাস পেয়েছি, বিজয় আমাদেরই হবে ৷ বাস্তবে ও তাই হয়েছে ৷
অনেকেই সালাউদ্দিন আইয়ুবী আর সুলতান মাহমূদকে একই চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের বীর সেনানী মনে করেন ৷ অবশ্য তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য একই ছিল ৷ তাদের মাঝে শুধু ক্ষেত্র ও প্রতিপক্ষের পার্থক্য ছিল ৷ আইয়ুবীর প্রতিপক্ষ ছিল ইহুদী ও খৃষ্টশক্তি আর মাহমূদের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল হিন্দু পৌত্তলিক রাজন্যবর্গ ৷
ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সেনাদের ঘায়েল করতো প্রশিক্ষিত সুন্দরী রমনী ব্যবহার করে নারী গোয়েন্দা দিয়ে, আর এর বিপরীতে সুলতান মাহমূদের বিরুদ্ধে এরা ব্যবহার করত শয়তানী যাদু ৷ তবে ইহুদী-খ্রিস্টানদের চেয়ে হিন্দুদের গোয়েন্দা তৎপরতা ছিল দুর্বল কিন্তু সুলতানের গোয়েন্দারা ছিল তৎপর ও চৌকস ৷
তবে একথা বলতেই হবে, সালাহ উদ্দিন আইউবীর গোয়েন্দারা যেমন দৃঢ়চিত্ত ও লক্ষ্য অর্জনে অবিচল ছিল, মাহমূদের গোয়েন্দারা ছিল নৈতিক দিক থেকে ততটাই দুর্বল ৷ এদের অনেকেই হিন্দু নারী ও যাদুর ফাঁদে আটকে যেতো ৷ অথবা হিন্দুস্থানের মুসলিম নামের কুলাঙ্গাররা এদের ধরিয়ে দিতো ৷ তারপরও সালাহ উদ্দিন আইউবীর চেয়ে সুলতান মাহমূদের গোয়েন্দা কার্যক্রম ছিল বেশি ফলদায়ক ৷
ইতিহাসকে পাঠকের কাছে সুখপাঠ্য, বিশেষ করে তরুণদের কাছে হৃদয়গ্রাহী করে পরিবেশনের জন্যে গল্পের মতো করে রচনা করা হয়েছে গ্রন্থ ৷ বাস্তবে এর সবটুকুই সত্যিকার ইতিহাসের নির্যাস ৷ আশা করি আমাদের নতুন প্রজন্ম ও তরুণরা এই সিরিজ পড়ে শত্রু-মিত্রের পার্থক্য, এদের আচরণ ও স্বভাব জেনে এবং আত্মপরিচয়ে বলীয়ান হয়ে পূর্বসূরিদের পথে চলার দিশা পাবে ৷